নবীন শিক্ষার্থীদের র্যাগিংয়ের অভিযোগে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩৭তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন উপ উপাচার্য সাজেদুল করিম।
তিনি বলেন, নবীন শিক্ষার্থীদের র্যাগিংয়ের দায়ে প্রক্টরিয়াল বডি তদন্ত ও পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে র্যাগ দেওয়া শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে শাস্তি প্রদানের জন্য সুপারিশ প্রদান করে। সিন্ডিকেট সভায় এ সুপারিশ গ্রহণ করা হয়।
বহিষ্কৃত ২৫ জনের মধ্যে ১৩ জন পরিসংখ্যান বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী; বাকি ১২ জন অর্থনীতি বিভাগের।
গত বছরের ২৭ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে পরিসংখ্যান বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ১৫ ছাত্রীকে র্যাগ দেওয়ায় বিভাগের আগের শিক্ষাবর্ষের ৫ ছাত্রীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
তাদের মধ্যে কাজী তাসমিয়া হক অরিশা বহিষ্কার হয়েছেন ৪ সেমিস্টারের জন্য। বাকি চারজন ফারজানা মেহেরুন নূহ্য, তাসমিয়াহ আলম মাইশা, লামিয়া ইসমাইল জুঁই ও শ্রাবণী দে প্রিয়াকে আবাসিক হল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। তাদের মধ্যে বর্তমানে কারো যদি আবাসিকতা নাও থাকে, তারা হলে সিটের জন্য ভবিষ্যতেও যোগ্য হবেন না। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে র্যাগিংয়ের মত কোনো কর্মকাণ্ডে না জড়ানোর প্রশ্নে প্রক্টরিয়াল বডির কাছে তাদের মুচলেকা দিতে বলা হয়েছে।
গত বছরের ১৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন বিসমিল্লাহ রেস্টুরেন্টের পাশে একটি বাসায় একই বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ১০ থেকে ১৫ শিক্ষার্থীকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে র্যাগ দেওয়ার অভিযোগে আগের শিক্ষাবর্ষের ৮ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এ র্যাগিংয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে সাখাওয়াত হোসেন ও সাগর হোসেনকে ২ সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
একইসঙ্গে শিবরাজ ত্রিপুরা, জুবায়ের আবদুল্লাহ, রিয়াদুস সালেহীন রিয়ান, তন্ময় কর্মকার সাগর, ইয়াজউদ্দিন পাটোয়ারী ও নাফিজ ইমতিয়াজ রোহানকে আবাসিক হল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার অথবা হলে ভর্তি না থাকলে ভবিষ্যতে সিট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে র্যাগিংয়ের মত কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত হবেন না—এমন মুচলেকা প্রক্টরিয়াল বডির কাছে দিতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে মেসে নিয়ে শিক্ষার্থীদের মানসিক নিপীড়নের অভিযোগে অর্থনীতি বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ১২ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ফাহিম মুনস্তাসিরকে আজীবন ও জুনাইদ মোস্তকিম অয়নকে বহিষ্কার করা হয়েছে ৪ সেমিস্টারের জন্য। বাকি ১০ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে ২ সেমিস্টারের জন্য।
তারা হলেন, প্রীতম সাহা, শরিফুজ্জামান খান আতিফ, সাবিত আবরার তাজিম, অনিক আহমেদ, সুয়েল রানা, যুবায়ের হোসেন তালুকদার জিম, নাঈম মিয়া, বিকাশ চন্দ্র ধর, মিঞা মো. সাইয়্যেদুল বাশার রিফাত ও রাজন সাহা সানি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোখলেসুর রহমান বলেন, “র্যাগিংয়ের বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স। নবীন শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসে র্যাগিংয়ের ফলে মানসিকভাবে ট্রমাটাইজ হয়ে যায়। এতে অনেকে অ্যাকাডেমিক জায়গা থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে।
এ র্যাগিংয়ের ঘটনা অনেক আগের। ভাল করে তদন্ত সাপেক্ষে র্যাগ দেওয়া শিক্ষার্থীদের বিচারের আওতায় আনতে আমরা প্রক্টরিয়াল বডি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সুপারিশ করেছি।