৭ ঘন্টার পথ এখন ১৪ ঘন্টা
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক প্রকল্পের পাঁচ বছর পার হলেও অগ্রগতি মাত্র ১৫ শতাংশ। ২১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক এখন গর্ত, ভাঙাচোরা ও যানজটে পরিণত হয়েছে যাত্রীদের দুঃস্বপ্নে।
১৬ হাজার ৯১৯ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে। কিন্তু জমি অধিগ্রহণের জটিলতা ও ইউটিলিটি স্থানান্তরে দীর্ঘ বিলম্বে কাজ প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। প্রকল্প পরিচালক একে মোহাম্মদ ফজলুল করিম জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব নয়।
প্রকল্পে ৬৬টি সেতু, ৩০৫টি কালভার্ট, ছয়টি রেলওয়ে ওভারব্রিজ, ৩৭টি ইউ-টার্ন এবং ২৬টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু জমি না পাওয়ায় বেশিরভাগ প্যাকেজেই কাজ শুরু হয়নি। ফলে ঢাকা থেকে সিলেট যেতে যেখানে আগে সময় লাগত ৬–৭ ঘণ্টা, এখন লাগছে ১২–১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত।
যাত্রীদের অভিযোগ, মহাসড়কের বহু অংশে বড় গর্ত, ধ্বসে পড়া রাস্তা ও একলেনে চলাচলের কারণে ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে। আল-মোবারাকা ও এনা পরিবহনের চালকরা জানান, আশুগঞ্জ থেকে সরাইল পর্যন্ত অংশটি সবচেয়ে ভয়াবহ—এই অংশে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান আফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচারের কাজ গত বছর আগস্টে বন্ধ হয়ে যায় রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ভারতীয় ঠিকাদাররা ফিরে এলে কাজ পুনরায় শুরু হতে পারে, তবে দীর্ঘদিনের অবহেলায় পুরো মহাসড়ক এখন জরাজীর্ণ। রক্ষণাবেক্ষণের তহবিল না থাকায় অস্থায়ী মেরামতও সম্ভব হচ্ছে না।
সড়কের এই বেহাল অবস্থায় যাত্রীরা এখন বিকল্প হিসেবে বিমান ও রেলপথ বেছে নিচ্ছেন। ইউএস-বাংলা, নভোএয়ার ও এয়ার অ্যাস্ট্রা জানিয়েছে, ঢাকা-সিলেট রুটে তাদের সব ফ্লাইট প্রায় পূর্ণ থাকে, যাত্রীচাহিদা দ্রুত বাড়ছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারাও জানান, মহাসড়কের দুরাবস্থার কারণে ট্রেনে যাত্রীর চাপ কয়েকগুণ বেড়েছে। অনেকেই টিকিট ছাড়াই উঠছেন, আর মানবিক কারণে কর্তৃপক্ষ তা মেনে নিচ্ছে।
সরকারের উচ্চপর্যায়ে অতিরিক্ত তহবিল চাওয়ার পরও প্রকল্পের দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় সাধারণ মানুষ এখন শুধু একটি প্রশ্নই করছে—কবে এই দুর্ভোগের অবসান ঘটবে?