, বুধবার, ০৬ আগস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
জুলাই গণভ্যূত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা জামায়াতের গণমিছিল সিলেটে চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে বিক্ষোভ, আটক ৩ হাজার হাজার নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে বিশ্বনাথে বিএনপির বিজয় মিছিল ৩৬ জুলাইয়ে সিলেটে শহীদদের স্মরণে ৩৬টি বৃক্ষরোপণ ভারী বৃষ্টিতে বাড়ছে নদীর পানি, সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যার শঙ্কা বিমানবন্দরে সংবর্ধিত ফ্যাসিবাদবিরোধী সাংবাদিক এমদাদ চৌধুরী দীপু জুলাই মাসে সিলেট বিভাগে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২৬ জন সিলেটে জোড়া খুনের মামলার রায়ে ২ ভাইয়ের মৃত্যুদণ্ড সিলেটে ফের বাড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গুর প্রকোপ : ৪ জন শনাক্ত বাস চালক গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সিলেটের ৩ জেলায় বাস চলাচল বন্ধ
বিজ্ঞাপন :
সকল জেলায় সাংবাদিক নিয়োগ চলছে

মৌলভীবাজারে পোল্ট্রি খামারে অজ্ঞাত রোগের প্রাদুর্ভাব, দেড় লাখ মুরগির মৃত্যু

মৌলভীবাজারে পোল্ট্রি খামারগুলোতে আকস্মিকভাবে অজ্ঞাতনামা রোগের প্রাদূর্ভাব দেখা দিয়েছে। গত দশদিনের ব্যবধানে জেলার বিভিন্ন পোল্ট্রি ফার্মে দেড় লাখের বেশি মুরগি মারা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে লেয়ার, বয়লার এবং সোনালী জাতের মুরগি।

খামার মালিকরা জানিয়েছে, তারা নানা ধরনের ঔষধ প্রয়োগ করেও কোনো ফল পাচ্ছেন না। ফলে এই রোগ দ্রুত গতিতে জেলা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে।

জেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা প্রাথমিকভাবে এই রোগকে ‘রাণী ক্ষেত’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তবে রোগটির প্রকৃত কারণ জানা যায়নি এবং আরও তদন্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করার কথা জানিয়েছেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা ডা. মো. আশরাফুল আলম খান জানান, রোগটির লক্ষণ দেখে ধারণা করা হচ্ছে এটি রাণী ক্ষেত, তবে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।

মৌলভীবাজার জেলার সদর, রাজনগর, কমলগঞ্জ, কুলাউড়া সহ সবকটি উপজেলায় এ রোগের প্রাদূর্ভাব ঘটেছে। রোগের কারণে মুরগিগুলো প্রথমে ঝিমুনি দেখাতে শুরু করে এবং পরে একে একে মারা যায়। ফার্ম মালিকরা জানান, তারা বিভিন্ন ধরনের ঔষধ প্রয়োগ করেও রোগটি প্রতিরোধ করতে পারেননি। ফলস্বরূপ, জেলার পোল্ট্রি ফার্মগুলোতে মারাত্মক আকারে এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।

শনিবার (০৮ মার্চ) পর্যন্ত রাজনগর উপজেলার জনতা পোল্ট্রি এবং সদর উপজেলার বর্ষিজোড়া পোল্ট্রি ফার্মে একদিনে প্রায় ২ হাজার ৫০০ মোরগ মারা গেছে। একই দিনে, আরও ৪ হাজার মুরগি আক্রান্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পোল্ট্রি ফার্ম মালিকরা জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহে মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার মুরগি মারা গেছে।

পোল্ট্রি ফার্ম মালিকরা জানান, তারা করোনাকালেও এমন ক্ষতির সম্মুখীন হননি। তবে এবারের রোগের কারণে তারা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। শ্যামরাবাজার এলাকার পোল্ট্রি ব্যবসায়ী মো. সায়েম জানান, গত মাসের মধ্যে তার দুটি ফার্মে প্রায় ১৫ হাজার মুরগি মারা গেছে। তার মতে, এবারের ভাইরাসের কারণে যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়।

অপর এক ফার্ম মালিক, খালেদ আহমেদ জানান, তার দুটি ফার্মে ৮ হাজার বয়লার এবং লেয়ার মুরগির বাচ্চা উঠেছিল। রোজা ও ঈদে বিক্রি করে তিনি কিছু আয় করার পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু এখন তার ১ হাজার মুরগি মারা গেছে।

পোল্ট্রি ফার্ম সমিতির সদস্যদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত কমলগঞ্জের বিভিন্ন ফার্মে ২০ হাজার, কুলাউড়ায় ৩০ হাজার, এবং রাজনগরে ৪০ হাজারের বেশি মুরগি মারা গেছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে এবং ফার্ম পরিদর্শন করছে। তবে, পোল্ট্রি ফার্ম মালিকদের দেয়া মৃত মুরগির সংখ্যা এবং তথ্যের সঙ্গে একমত না হয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানিয়েছে, তারা এখন পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার মুরগির মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন।

মৌলভীবাজার জেলায় মোট ১ হাজার ১৩৩ টি পোল্ট্রি ফার্ম রয়েছে। প্রাণি সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, তারা পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে আরও নমুনা সংগ্রহ করবেন এবং আক্রান্ত ফার্মগুলোতে ওষুধ প্রয়োগ চালিয়ে যাবেন। কিন্তু, স্থানীয় ফার্ম মালিকরা অভিযোগ করেছেন যে, এতদিনেও কোনো কার্যকর প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।

পোল্ট্রি ফার্ম মালিকরা শঙ্কিত যে, যদি এই রোগের প্রকোপ আরও বাড়ে, তবে পুরো জেলার পোল্ট্রি ব্যবসা বড় ধরনের সংকটের মধ্যে পড়বে।

জনপ্রিয়

জুলাই গণভ্যূত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা জামায়াতের গণমিছিল

মৌলভীবাজারে পোল্ট্রি খামারে অজ্ঞাত রোগের প্রাদুর্ভাব, দেড় লাখ মুরগির মৃত্যু

প্রকাশের সময় : ০৮:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ মার্চ ২০২৫

মৌলভীবাজারে পোল্ট্রি খামারগুলোতে আকস্মিকভাবে অজ্ঞাতনামা রোগের প্রাদূর্ভাব দেখা দিয়েছে। গত দশদিনের ব্যবধানে জেলার বিভিন্ন পোল্ট্রি ফার্মে দেড় লাখের বেশি মুরগি মারা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে লেয়ার, বয়লার এবং সোনালী জাতের মুরগি।

খামার মালিকরা জানিয়েছে, তারা নানা ধরনের ঔষধ প্রয়োগ করেও কোনো ফল পাচ্ছেন না। ফলে এই রোগ দ্রুত গতিতে জেলা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে।

জেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা প্রাথমিকভাবে এই রোগকে ‘রাণী ক্ষেত’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তবে রোগটির প্রকৃত কারণ জানা যায়নি এবং আরও তদন্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করার কথা জানিয়েছেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা ডা. মো. আশরাফুল আলম খান জানান, রোগটির লক্ষণ দেখে ধারণা করা হচ্ছে এটি রাণী ক্ষেত, তবে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।

মৌলভীবাজার জেলার সদর, রাজনগর, কমলগঞ্জ, কুলাউড়া সহ সবকটি উপজেলায় এ রোগের প্রাদূর্ভাব ঘটেছে। রোগের কারণে মুরগিগুলো প্রথমে ঝিমুনি দেখাতে শুরু করে এবং পরে একে একে মারা যায়। ফার্ম মালিকরা জানান, তারা বিভিন্ন ধরনের ঔষধ প্রয়োগ করেও রোগটি প্রতিরোধ করতে পারেননি। ফলস্বরূপ, জেলার পোল্ট্রি ফার্মগুলোতে মারাত্মক আকারে এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।

শনিবার (০৮ মার্চ) পর্যন্ত রাজনগর উপজেলার জনতা পোল্ট্রি এবং সদর উপজেলার বর্ষিজোড়া পোল্ট্রি ফার্মে একদিনে প্রায় ২ হাজার ৫০০ মোরগ মারা গেছে। একই দিনে, আরও ৪ হাজার মুরগি আক্রান্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পোল্ট্রি ফার্ম মালিকরা জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহে মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার মুরগি মারা গেছে।

পোল্ট্রি ফার্ম মালিকরা জানান, তারা করোনাকালেও এমন ক্ষতির সম্মুখীন হননি। তবে এবারের রোগের কারণে তারা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। শ্যামরাবাজার এলাকার পোল্ট্রি ব্যবসায়ী মো. সায়েম জানান, গত মাসের মধ্যে তার দুটি ফার্মে প্রায় ১৫ হাজার মুরগি মারা গেছে। তার মতে, এবারের ভাইরাসের কারণে যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়।

অপর এক ফার্ম মালিক, খালেদ আহমেদ জানান, তার দুটি ফার্মে ৮ হাজার বয়লার এবং লেয়ার মুরগির বাচ্চা উঠেছিল। রোজা ও ঈদে বিক্রি করে তিনি কিছু আয় করার পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু এখন তার ১ হাজার মুরগি মারা গেছে।

পোল্ট্রি ফার্ম সমিতির সদস্যদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত কমলগঞ্জের বিভিন্ন ফার্মে ২০ হাজার, কুলাউড়ায় ৩০ হাজার, এবং রাজনগরে ৪০ হাজারের বেশি মুরগি মারা গেছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে এবং ফার্ম পরিদর্শন করছে। তবে, পোল্ট্রি ফার্ম মালিকদের দেয়া মৃত মুরগির সংখ্যা এবং তথ্যের সঙ্গে একমত না হয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানিয়েছে, তারা এখন পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার মুরগির মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন।

মৌলভীবাজার জেলায় মোট ১ হাজার ১৩৩ টি পোল্ট্রি ফার্ম রয়েছে। প্রাণি সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, তারা পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে আরও নমুনা সংগ্রহ করবেন এবং আক্রান্ত ফার্মগুলোতে ওষুধ প্রয়োগ চালিয়ে যাবেন। কিন্তু, স্থানীয় ফার্ম মালিকরা অভিযোগ করেছেন যে, এতদিনেও কোনো কার্যকর প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।

পোল্ট্রি ফার্ম মালিকরা শঙ্কিত যে, যদি এই রোগের প্রকোপ আরও বাড়ে, তবে পুরো জেলার পোল্ট্রি ব্যবসা বড় ধরনের সংকটের মধ্যে পড়বে।