সিলেটের জকিগঞ্জে এক মানবিক পদক্ষেপে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. সারওয়ার আলমসহ উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ ৩ কর্মকর্তা। দীর্ঘ ছয় মাস অবরুদ্ধ থাকার পর প্রশাসনের হস্তক্ষেপে অবশেষে মুক্তি পেলেন জেসমিন আক্তার ও তার পরিবার। এই উদ্যোগের ফলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. সারওয়ার আলম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহবুবুর রহমান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রণয় বিশ্বাস এবং জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম মুন্না সর্বমহলে প্রশংসায় ভাসছেন।
গত বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) জেলা প্রশাসকের নির্দেশে পৌর এলাকার বিলেরবন্দ গ্রামে প্রভাবশালী এমাদ উদ্দিন ও তার ভাই এনাম আহমদের নির্মিত অমানবিক দেয়াল ভেঙে অসহায় জেসমিন আক্তারের পরিবারের চলাচলের পথ উন্মুক্ত করেন ইউএনও, এসিল্যান্ড, পৌর প্রশাসক ও থানা পুলিশ। দেয়াল অপসারণের মুহূর্তে স্বস্তি ও আনন্দে চোখ ভিজে ওঠে উপস্থিত মানুষের। অনেকেই বলছিলেন—“এ যেন ন্যায় ও মানবতার বিজয়।”
এ দৃশ্যের ভিডিও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। জকিগঞ্জ আই টিভি ও জকিগঞ্জ নিউজের ফেসবুক পেইজে প্রকাশিত ভিডিওটি ইতোমধ্যে এক মিলিয়নের বেশি মানুষ দেখেছেন। মন্তব্যে সাধারণ মানুষ প্রশাসনের এই সাহসী ও মানবিক পদক্ষেপকে স্বাগত জানান। তাদের মতে, প্রশাসনের এ উদ্যোগ শুধু একটি পরিবারকে নয়, বরং পুরো এলাকাকে অন্যায়ের হাত থেকে মুক্ত করেছে।
এ ঘটনাকে ঘিরে সামাজিক ও জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক সাড়া পড়ে। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায়ও রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকরা জেলা প্রশাসকসহ চার কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ জানান।
জকিগঞ্জ প্রেসক্লাবের প্রচার সম্পাদক ও উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য সাংবাদিক কেএম মামুন বলেন, “আমরা শুরু থেকেই এ ঘটনাটি তুলে ধরেছিলাম। তবে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে যে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হলো, তা প্রমাণ করে মানুষ প্রশাসনের কাছেই নিরাপদ। এ ধরনের দৃঢ় অবস্থান ভবিষ্যতে অন্যায়-অবিচার রুখে দাঁড়াতে সহায়ক হবে।”
মুক্তির পর আবেগাপ্লুত কণ্ঠে জেসমিন আক্তার বলেন, “আমার সন্তানরা অবশেষে মুক্ত হলো। এখন তারা আবার স্কুলে যেতে পারবে। আমি ডিসি স্যার, ইউএনও, এসিল্যান্ড এবং ওসি, জকিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাংবাদিকবৃন্দের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।”
এলাকার প্রবীণ নোমান উদ্দিন বলেন, “একটি পরিবারকে টাকার জোরে বন্দি রাখা ভয়াবহ অমানবিক কাজ। প্রশাসনের দৃঢ় পদক্ষেপে তাদের মুক্তি—এটি আমাদের জন্য স্বস্তির খবর।”
প্রসঙ্গত, জকিগঞ্জ পৌর এলাকার বিলেরবন্দ গ্রামে আজিজিয়া কমিউনিটি সেন্টারের মালিক প্রভাবশালী এমাদ উদ্দিন ও তার ভাই এনাম আহমদ জেসমিন আক্তারের বাড়ির প্রবেশপথ বন্ধ করে পাঁচ ফুট উঁচু দেয়াল নির্মাণ করেছিলেন। এর ফলে জেসমিন, তার চার সন্তান, বৃদ্ধা শাশুড়ি ও মানসিক ভারসাম্যহীন স্বামীকে ছয় মাস ঘরবন্দি জীবন কাটাতে হয়। অসহায় জেসমিন বারবার স্থানীয় প্রভাবশালীদের কাছে কাকুতি-মিনতি করেও সাড়া পাননি। বরং তার অসুস্থ স্বামীকে অপমান করে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে এলাকাবাসী। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে এবং শেষমেশ প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপে মুক্তি মেলে পরিবারের।