সিলেটে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের এক মতবিনিময় সভা করেছেন নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম।
সোমবার (২৫ আগস্ট) বিকেলে সিলেট জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
সভায় নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম কে সহযোগিতার আশ্বাস দেন উপস্থিত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। এসময় সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত পাথর কাণ্ডের সফল সমাধানের পর শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করবেন বলে জানান ডিসি সারওয়ার।
জেলা প্রশাসক আরও উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যদি প্রশাসনের সাথে একযোগে কাজ করেন তবে জেলার সার্বিক উন্নয়ন ও জনসেবা প্রদান করা অনেক সহজ হবে। তিনি সকলের কাছে অবাধ ও গঠনমূলক সহযোগিতা কামনা করেন।
উপস্থিত রাজনৈতিক নেতারা জেলা প্রশাসককে তাদের সম্পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তারা জেলার বিভিন্ন সমস্যা, বিশেষ করে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের সেবার মানোন্নয়ন, যানজট নিরসন, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও উন্নত করার বিষয়ে মতামত ও পরামর্শ প্রদান করেন।
এদিকে, এনসিপির মহানগর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী জানান, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে লুটের তালিকায় তার নাম আসায় বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রমাণের দাবি জানান তিনি।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, পর্যটন কেন্দ্রে দুর্বৃত্তায়নের বিপক্ষে শক্ত অবস্থানে থাকবে বিএনপি।
মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী পাথর লুটের ঘটনায় তার নাম জড়ানোর বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এসময় তিনি প্রকৃত দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।
বিএনপির কেন্দ্রীয় ক্ষুদ্র উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক প্রশ্ন রেখে বলেন, “রাজনীতিবিদদের সংশ্লিষ্টতা না থাকলে পাথর লুট কীভাবে হল?”
বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ছয় লেন প্রকল্পসহ সিলেটের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ধীরগতি সম্পর্কে জেলা প্রশাসককে অবগত করেন। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের উদ্যোগ প্রত্যাশা করেন তিনি।
সভায় জামায়াত নেতৃবৃন্দ মাদক, চোরাচালানসহ সীমান্তে অপকর্ম রোধে প্রশাসনকে কাজ করার অনুরোধ জানান। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে নজরদারির আহ্বান জানান তারা।
সিলেট মহানগর জামায়াত আমির ফখরুল ইসলাম বলেন, পর্যটন কেন্দ্র সাদাপাথর লুটেরা চক্র ধ্বংস করায় দেশ বিদেশে সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। দুদকের বরাত দিয়ে তার নাম জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশে ব্যক্তি হিসেবে অপমানিত হয়েছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন। এ ব্যাপারে ব্যক্তি হিসেবে নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে প্রশাসনকে খোঁজ খবর নেওয়ার দাবি জানান তিনি। লুটকাণ্ডে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করারও দাবিও জানান এই জামায়াত নেতা।
জেলা আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান জানান, পাথর লুটের ঘটনা লুকাতে পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক নেতাদের নাম জড়ানো হয়েছে। তবে কে বা কারা ঘটিয়েছে তা পরিষ্কার করতে জেলা প্রশাসকের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এনসিপি আহ্বায়ক নাজিম উদ্দীন সাহান তার বক্তব্যে পাথরকান্ডে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। পাশাপাশি পাথরকান্ডে দুদকের প্রতিবেদনে তার নাম আসলেও এসবে তিনি জড়িত নন বলে জানান।
পাথর লুটে রাজনৈতিক নেতাদের নাম জড়ানোয় ক্ষোভ জানিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ। বৈধ পন্থায় লিজের মাধ্যমে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের পক্ষে দাবি দলটির।
আর এবি পার্টির দাবি, দুদকের প্রতিবেদন ভুল হলে কারা এ ঘটনায় জড়িত তাদের নামের তালিকা ১মাসের মধ্যে প্রকাশের৷
নেতারা বলেন, প্রশাসনের সকল উন্নয়নমূলক কাজে তারা সর্বদা পাশে থাকবেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে যাবেন। নতুন জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে ও সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সিলেট জেলা আরও বেশি উন্নতি ও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাবে বলে সকলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সভাটি অত্যন্ত সুসংগঠিত ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হয়। সভা শেষে সকলে জেলার সার্বিক কল্যাণ ও উন্নতির জন্য একযোগে কাজের অঙ্গীকার করেন।