দীর্ঘ চার বছরের অচলাবস্থার পর অবশেষে ছাতক-সিলেট রেলপথে আবারও ট্রেনের হুইসেল বাজতে যাচ্ছে। এই রেলপথ সচল করতে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ে ২১৭ কোটি টাকার একটি বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এরই মধ্যে সংস্কার কাজও শুরু হয়েছে পুরোদমে। পুরোনো রেললাইন ও স্লিপারগুলো অপসারণসহ সংস্কার কার্যক্রম চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে পুরোদমে শুরু হয়েছে।
এই উদ্যোগের ফলে ছাতকের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে আবারও প্রাণ ফিরবে বলে আশা করছেন স্থানীয়রা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে শিল্পনগরী ছাতকের পণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে এই রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছিল। তখন ছাতকের উৎপাদিত পাথর, বালু, চুনাপাথর ও কমলালেবুসহ বিভিন্ন পণ্য এই রেলপথ দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হতো, যা পুরো জেলার অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখত। তবে ২০২০ সালের ২৪শে মার্চ করোনা মহামারির কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এরপর ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যায় ছাতক বাজার থেকে সিলেট পর্যন্ত ৩৪ কিলোমিটার রেললাইনের মধ্যে ১২ কিলোমিটার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে গত চার বছর ধরে এই রুটে ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। এতে স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়ে এবং অর্থনীতিতে ধস নামে।
তবে আশার কথা হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন সংস্কারের জন্য ২১৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। পুরোনো রেললাইন ও স্লিপারগুলো অপসারণসহ সংস্কার কার্যক্রম চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে পুরোদমে শুরু হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যেই প্রকল্পটি শেষ হবে।
এদিকে স্থানীয়রা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও দ্রুততার সঙ্গে কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা নূরু মিয়া বলেন, একটা সময় ট্রেনে করে সিলেটে যাওয়া-আসা করতাম, অনেক ভালো লাগত। কিন্তু গত ৪ বছর ধরে এ রেলপথ বন্ধ রয়েছে। আমরা চাই দ্রুতই এই রেললাইন চালু করা হোক।
আরেক স্থানীয় বাসিন্দা সুলেমান মিয়া বলেন, আগে আবাদকৃত কৃষিপণ্য ভোরে ট্রেনে করে সিলেটে নিয়ে গেলে ভালো দামে বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ব্যবসা মান্দা যাচ্ছে।
মোহাম্মদ মিয়া নামের স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে পাথর, চুনাপাথর, সিমেন্টসহ ছাতকের বিভিন্ন ধরনের পণ্য রেলপথ দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেত। কিন্তু রেললাইন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গাড়ি পথে পণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে আমাদের পরিবহন খরচ বেশি হচ্ছে।
এ বিষয়ে ছাতক রেলস্টেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব বলেন, “নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। আশা করছি, দ্রুতই এই রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।”