ঢাকা-সিলেট মহাসড়কসহ সিলেটের যোগাযোগব্যবস্থার দ্রুত প্রতিকার চেয়ে আগামী রোববার এক ঘণ্টা সিলেট নগরের দোকানপাট বন্ধ রাখার পাশাপাশি যানবাহনে কর্মবিরতি, প্রতীকী অনশন এবং পরদিন সোমবার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সূচনাস্থলে গণ-অবস্থান ও মানববন্ধন কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে।
সিলেটে পরপর দুই দিন পৃথকভাবে এসব কর্মসূচির আয়োজন করেছেন বিএনপির দুই প্রভাবশালী নেতা।
তারা হলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী এবং জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত নয়টায় সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী তার বাসভবনে এক বৈঠক করেন। এতে নগরের সুশীল সমাজ, শিক্ষক, পরিবহন ও ব্যবসায়ী নেতাসহ সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। পরে আরিফুল হকের প্রস্তাব অনুযায়ী রোববার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রতীকী ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাজ দ্রুত শেষ করা; সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে নতুন ট্রেন ও বগি চালু এবং সিলেট-ঢাকা রুটে বিমানভাড়া যৌক্তিক ও সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার দাবি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জানানো হয়। এ ছাড়া সিলেটের অভ্যন্তরীণ নাজুক যোগাযোগব্যবস্থারও দ্রুত প্রতিকার চাওয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে রাত সাড়ে ১২টার দিকে আরিফুল হক চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, প্রতীকী ধর্মঘট চলাকালে নগরের প্রতিটি বিপণিবিতান ও দোকান ব্যবসায়ীরা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ছাড়া ওই এক ঘণ্টা নগরে সব ধরনের যানবাহন চলাচলও বন্ধ থাকবে। সিলেটবাসী ওই দিন নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় এক ঘণ্টার জন্য অবস্থান নিয়ে সড়ক দ্রুত সংস্কারের দাবি জানাবেন। পরে ১৫ দিনের জন্য আলটিমেটাম দিয়ে কর্মসূচি শেষ হবে। ওই সময়ের মধ্যে প্রতিকার না পেলে সিলেটবাসী কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।
এদিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নাজুক ও বেহাল অবস্থার প্রতিকার চেয়ে ‘মহাসড়কের সূচনাস্থলের দুই পাশে গণ-অবস্থান ও মানববন্ধন’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী। সোমবার দুপুর ১২টায় দক্ষিণ সুরমার হুমায়ূন রশীদ চত্বর এলাকায় মহাসড়কের দুই পাশে অবস্থান নিয়ে এ কর্মসূচি পালিত হবে।
গতকাল রাত সোয়া আটটার দিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী কর্মসূচির বিষয়টি জানিয়েছেন। এতে সিলেটের সর্বস্তরের মানুষ, বিএনপির নেতা-কর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের উপস্থিত থাকতে তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন।
আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, চলাচলে দুর্ভোগের কারণে সিলেটের মানুষ এখন ক্ষুব্ধ। আগে তিন–চার ঘণ্টায় যেখানে সিলেট থেকে ঢাকা যাওয়া যেত, এখন সেখানে সময় লাগছে ১৬ থেকে ২৪ ঘণ্টা। দ্রুত এ সমস্যার সমাধানের দাবিতে গণ-অবস্থান ও মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। কেবল বিএনপির নেতা-কর্মীরা নন, ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষও কর্মসূচিতে একাত্ম হবেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার কাজ আট বছর ধরে চলছে। এতে সম্প্রতি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানজট তীব্র রূপ নিয়েছে। কাজটি করছে ভারতীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পালাবদলের পর ওই প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা দেশে ফিরে যান। তিন মাস পর তাঁরা বাংলাদেশে ফিরে কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে তাঁদের অনেক মালামাল খোয়া যায়। এতে কাজের গতি কমে যায়।