সিলেটের ভোলাগঞ্জকাণ্ডের পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি জোরদার হওয়ায় অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে অবৈধভাবে পাথর ও বালু উত্তোলন। তবে এখনও লাগামহীন জৈন্তাপুরের রাংপানি নাপিতখাল নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন।
জানা গেছে, প্রশাসনের ঘন ঘন অভিযান ও নানামুখী পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে সিলেটজুড়ে অধিকাংশ বালুমহালে কাজ চলছে নিয়ন্ত্রিতভাবে। ব্যতিক্রম চিত্র শুধু জৈন্তাপুরে। সেখানে নাপিতখাল নদীর লক্ষ্মীপুর গ্রাম এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলমান। যার কারণে নদী তীরবর্তী গ্রাম, দুটি গ্রামীণ রাস্তা, বসতঘর, ফসলি জমি ও একটি কবরস্থান ভাঙন হুমকিতে রয়েছে। নদীভাঙন নিয়ে উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে দুই পারের বাসিন্দাদের। বালুমহালের প্রভাবশালীদের ভয়ে প্রতিবাদের সাহস পাচ্ছেন না কেউই।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জৈন্তাপুরে তিনটি বালুমহাল ইজারা দেওয়া হলেও রাংপানি নদীতে কোনো ইজারা দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি ইজারার বাইরে বালু উত্তোলনবিরোধী অভিযান শুরু করে উপজেলা প্রশাসন। রাংপানির নাপিতখাল নদীতে নতুন করে বালু উত্তোলন শুরু করেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
সরেজমিন নদী তীরবর্তী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে নাপিতখাল নদীর সরু অংশ ধরে মুল নদীতে প্রতিদিন শতাধিক বারকি নৌকা প্রবেশ করছে। এসব নৌকায় থাকা শ্রমিকরা বালু শ্রমিকদের সহায়তায় অবৈধভাবে উত্তোলন করা বালু নিয়ে যাচ্ছেন বিক্রির উদ্দেশ্যে। ইজারা বহির্ভুত এই নদীর তীরবর্তী এলাকার অবৈধ বালুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকারীরা সেই শ্রমিকদের কাছ থেকেও নৌকাপ্রতি এক হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র হতে নাপিতখাল নদী থেকে বালু লুটের সঙ্গে, লক্ষ্মীপুরের জামাল মোল্লা, আব্দুল কুদ্দুস, আব্দুস সালাম, হুমায়ুন মোল্লা, হাসান আহমদ, ইমরান হোসেনসহ স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে তীরবর্তী গ্রামের বেশ কয়েকটি অংশে ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে স্থানীয়দের বসতভিটা, গ্রামীণ সড়ক, ফসলি জমি, কবরস্থানসহ বেশ কিছু স্থাপনা।
এদিকে বালু উত্তোলনের ফলে বন্যার সময় নদীভাঙনের প্রবণতা চরম আকার ধারণ করতে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এর আগে ২০২২ সালের বন্যায় নদীভাঙনের কারণে এই এলাকার বেশ কয়েকটি বসতঘর বিলীন হয় নদীতে। বালু উত্তোলনের সঙ্গে প্রভাবশালীরা জড়িত থাকায় গ্রামের মানুষ প্রতিবাদ করার সাহস পান না।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামের এক শিক্ষার্থী জানান, দুটি গ্রামীণ রাস্তা ও একটি কবরস্থান বিলীন হওয়ার পথে। এভাবে চলতে থাকলে গোটা গ্রাম হুমকির মুখে পড়বে।
অভিযোগের বিষয়ে আব্দুস সালাম জানান, বালু উত্তোলন বা বালু ব্যবসার সঙ্গে তাঁর কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। তিনি বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে বানোয়াট তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।
এদিকে প্রতি নৌকা থেকে এক হাজার টাকা করে চাঁদা উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো কথাই বলতে চাননি আরেক অভিযুক্ত হুমায়ুন মোল্লা। এ ছাড়া নদীর যে অংশ থেকে বালু তোলা হচ্ছে, সেটি বালুমহাল হিসেবে প্রশাসনের ইজারাভুক্ত কিনা– জানতে চাইলে হাসান আহমেদ জানেন, তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। তবে জামাল মোল্লা এ বিষয়ে সবকিছু জানেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য নজির আহমেদ বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাঁর এলাকার কারও ঘরবাড়ি নির্মাণ করলে হয়তো কেউ তুলতে পারে। তবে বিক্রির জন্য যারা বালু উত্তোলন করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
এলাকায় বালু উত্তোলনের বিষয়টি তাঁর জানা নেই উল্লেখ করে ওই ইউপি সদস্য জানান, এমনিতে নদীতে বালু উত্তোলন ও স্টিল বা ইঞ্জিনচালিত নৌকা যাতায়াতের কারণে এলাকার ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটের ক্ষতি হচ্ছে। বালু তোলার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই তাঁর কাছে।
নাপিতখাল নদীতে বালু উত্তোলনের বিষয়ে জৈন্তাপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জর্জ মিত্র চাকমা বলেন, এখন পর্যন্ত সিলেটের উল্লেখযোগ্য প্রায় সব জায়গায়ই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছেন তারা। এ কাজে অব্যাহত রয়েছে প্রশাসনের নজরদারি ও মাঠ পর্যায়ের অভিযান। এখন আবার কেউ যদি নদীতে নামে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।