, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
ডাক্তারী পেশা পৃথিবীর অন্যতম মহৎ ও মানবিক পেশা : ফখরুল ইসলাম মৌলভীবাজারে প্রেমিকার আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করায় প্রেমিক গ্রেপ্তার রাষ্ট্র ও জনগণের যে কোন প্রয়োজনে পুলিশ পাশে থাকবে :  এসএমপি কমিশনার সিলেট-ঢাকা ৬ লাইন মহাসড়ক কাজের দ্রুত অগ্রগতির ব্যাপারে প্রশাসন অত্যন্ত আন্তরিক : ইউএনও ঊর্মি রায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বাস খাদে পড়ে আহত ৩০ ইলিয়াস আলীকে কারা গুম করেছিল, ‘বের করা হয়েছে’ : ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটরের ঘোষণা সিলেটে ঘর থেকে তুলে নিয়ে প্রাণে মারার হুমকি দিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ১ আজ রোববার সিলেটে একঘন্টার জন্য বন্ধ থাকবে দোকানপাট, চলবে না যানবাহন উইমেন ফর উইমেন রাইটস’র মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কর্মহীন মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে : এডভোকেট জেবুন নাহার সেলিম

জাফলংয়ে দুই উপদেষ্টার গাড়ি আটকে দেয়ার নেতৃত্বে ছাত্রদল নেতা!

সিলেটের জাফলংয়ে দুই উপদেষ্টার গাড়ি বহর আটকে স্থানীয়দের বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আজির উদ্দিন। উপদেষ্টাদের গাড়ি বহর আটকের কারণ জানাতে আজির প্রকাশ্যে এসে পাথর মহাল খুলে দেওয়ার দাবি জানানোর মধ্য দিয়ে নিজেকে প্রকাশ করেছেন।

আজির উদ্দিন গোয়াইনঘাট উপজেলার পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন শাখা ছাত্রদলের সভাপতি পদে আছেন। পাশাপাশি তিনি ৫ আগস্ট পরবর্তী বাস্তবতায় জাফলং এলাকায় বালু-পাথর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের দাবিতে এর আগে বিভিন্ন বিক্ষোভেও আজির নেতৃত্ব দিয়েছেন।

শনিবার (১৪ জুন) সকালে সিলেটের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা জাফলং পরিদর্শন শেষে ফেরার পথে স্থানীয়দের বিক্ষোভ ও বাধার সম্মুখীন হয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

প্রত্যক্ষদর্শীসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে জাফলং বাজার এলাকায় উত্তেজিত স্থানীয়রা উপদেষ্টাদের রাস্তা আটকে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকলে বাধাগ্রস্ত হয় উপদেষ্টাদের গাড়ির বহর। এসব বিক্ষোভকারীদের কয়েকজন রাস্তায় শুয়ে পড়লে পরিস্থিতি আরও বিরূপ অবস্থা দেখা দেয়।

গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার মোহাম্মদ তোফায়েল আহমেদ জানান, আকস্মিকভাবে স্থানীয়রা উপদেষ্টাদের গাড়ি আটকে দেয়। পরে পুলিশ দ্রুত তাদেরকে সরিয়ে দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করে। সাড়ে ১২টা নাগাদ উপদেষ্টারা নিরাপদে হরিপুর গেস্টহাউসে পৌঁছেছেন।

দুই উপদেষ্টার সামনে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান ও বিক্ষোভ পরিস্থিতির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে চাঞ্চল্য দেখা দেয়। দুই উপদেষ্টার পরবর্তী ভোলাগঞ্জ সফরও বাতিল করা হয়।

উপদেষ্টারা জাফলং থেকে চলে যাওয়ার পর সামনে আসেন বিক্ষোভকারীরা। তখন তারা নিজেদের বক্তব্য বিভিন্ন মিডিয়াতে দেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপদেষ্টাদের গাড়ি বহন আটকে প্রথম সরাসরি কথা বলেন পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন ছাত্রদল সভ্পাতি আজির উদ্দিন।

তিনি উপদেষ্টা রিজওয়ানাকে সরাসরি বলেন, ‘ম্যাডাম পাথর না তুললে আমাদের এলাকা বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। পাথর কোয়ারি বন্ধ থাকলেও চুরি হয়ে যাচ্ছে। পাথর তুলতে হবে। এ ছাড়া আর কোনো পথ নেই।’ আজির এ কথা বলার পর ‘ভুয়া ভুয়া’স্লোগান শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে আজিরকে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিতে দেখা গেছে।

এ ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে আজির বলেন, ‘আমি না, আমরা যা করেছি তা এলাকাবাসীর স্বার্থে করেছি। এ নিয়ে আমার ভিডিওতে আমার বক্তব্য আছে।’

উপদেষ্টাদের সফর শেষে স্থানীয়দের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে একটি ভিডিওতে আজিরকে বলতে দেখা গেছে, ‘আমরা আশা করেছিলাম আজ তিনি (উপদেষ্টা রিজওয়ানা) ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে পাথর কোয়ারি খুলে দিয়ে শ্রমিকদের রুটি রুজির পথ খুলে দেবেন। কিন্তু কিছু দালাল চক্র উনাকে ভুলভাল বুঝিয়ে তিনি শ্রমিকদের পেটে লাথি মেরে চলে গেছেন। শ্রমিকদের একটাই দাবি, ভাত ও কাজের অধিকার। শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না করে উনি উনার গন্তব্যে পৌঁছে গেছেন। কিন্তু আমরা এই এলাকার পাঁচ লাখ শ্রমিক আন্দোলন করে যাব। যতদিন ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে জাফলং পাথর কোয়ারি খুলে না দেওয়া হবে, ততদিন।’

এর আগে জাফলং পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সিলেটের নান্দনিক ও নৈসর্গিক আবেদন আছে, এইরকম জায়গায় আমরা আর পাথর উত্তোলনে অনুমতি দিব না। এই জায়গা (জাফলং) প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা, আমরা কথা বলেছি পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে, এইখানে পরিবেশবান্ধব পর্যটনের বিকাশের মাধ্যমে যারা পাথর উত্তোলন করেন তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য।’

জাফলং এলাকায় অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলনের ফলে পরিবেশ ধ্বংস হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। জাফলং পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে এই এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে। আপাতত এখান থেকে আর পাথর উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হবে না। এখানে যেসব ক্রাশার মেশিন রয়েছে, সেগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। প্রয়োজনে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলো যদি সঠিকভাবে উন্নয়ন করা যায়, তাহলে এখান থেকে এমন রাজস্ব আসবে, যা লন্ডন থেকে আসা রেমিট্যান্সকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে-আমরা কি পাথর তুলে পরিবেশ ধ্বংস করব, না কি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষা করে পর্যটন বিকাশের মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরি করব।’

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ১৪ নভেম্বর জাফলংকে পরিবেশ-প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণার গেজেট প্রকাশ হয়। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এই আবেদন করেছিল ২০১২ সালে। এরপর থেকে কয়েকটি ধাপে জাফলং থেকে বালু ও পাথর কোয়ারির ইজারা কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছিল। এরপর ২০১৬ সালের ১১ জানুয়ারি জাফলংকে ‘ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য’ ঘোষণা করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এতে জাফলংয়ের ২২ দশমিক ৫৯ একর জায়গাকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়। উন্মুক্ত শিলাস্তর, চুনাপাথর সংরক্ষণ ও গবেষণার জন্য জাতীয় স্বার্থে ২৫ দশমিক ৫৯ একর ভূমিকে ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য ঘোষণা করা হয়েছে জানিয়ে বলা হয়েছিল, ওই ভূমিতে আন্তর্জাতিক মানের একটি ভূতাত্ত্বিক জাদুঘর নির্মাণ করা হবে। জাফলং ইসিএভুক্ত এলাকা ছাড়াও ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য হিসেবে চিহ্নিত এলাকায় একটি ভূতাত্ত্বিক জাদুঘর স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।

তবে গত বছর ৫ আগস্ট পরবর্তী বাস্তবতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুপস্থিতিতে সেখানে ব্যাপক লুটপাটে প্রায় ১ কোটি ঘনফুট পাথর উধাও হয়ে গেছে। সীমান্ত এলাকা হওয়ায় সেখানে সেনা সদস্যরাও যেতে পারেননি। এরপর থেকে জাফলংয়ে বালু ও পাথর লুটপাট চলছে।

জনপ্রিয়

ডাক্তারী পেশা পৃথিবীর অন্যতম মহৎ ও মানবিক পেশা : ফখরুল ইসলাম

জাফলংয়ে দুই উপদেষ্টার গাড়ি আটকে দেয়ার নেতৃত্বে ছাত্রদল নেতা!

প্রকাশের সময় : ০৫:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫

সিলেটের জাফলংয়ে দুই উপদেষ্টার গাড়ি বহর আটকে স্থানীয়দের বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আজির উদ্দিন। উপদেষ্টাদের গাড়ি বহর আটকের কারণ জানাতে আজির প্রকাশ্যে এসে পাথর মহাল খুলে দেওয়ার দাবি জানানোর মধ্য দিয়ে নিজেকে প্রকাশ করেছেন।

আজির উদ্দিন গোয়াইনঘাট উপজেলার পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন শাখা ছাত্রদলের সভাপতি পদে আছেন। পাশাপাশি তিনি ৫ আগস্ট পরবর্তী বাস্তবতায় জাফলং এলাকায় বালু-পাথর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের দাবিতে এর আগে বিভিন্ন বিক্ষোভেও আজির নেতৃত্ব দিয়েছেন।

শনিবার (১৪ জুন) সকালে সিলেটের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা জাফলং পরিদর্শন শেষে ফেরার পথে স্থানীয়দের বিক্ষোভ ও বাধার সম্মুখীন হয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

প্রত্যক্ষদর্শীসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে জাফলং বাজার এলাকায় উত্তেজিত স্থানীয়রা উপদেষ্টাদের রাস্তা আটকে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকলে বাধাগ্রস্ত হয় উপদেষ্টাদের গাড়ির বহর। এসব বিক্ষোভকারীদের কয়েকজন রাস্তায় শুয়ে পড়লে পরিস্থিতি আরও বিরূপ অবস্থা দেখা দেয়।

গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার মোহাম্মদ তোফায়েল আহমেদ জানান, আকস্মিকভাবে স্থানীয়রা উপদেষ্টাদের গাড়ি আটকে দেয়। পরে পুলিশ দ্রুত তাদেরকে সরিয়ে দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করে। সাড়ে ১২টা নাগাদ উপদেষ্টারা নিরাপদে হরিপুর গেস্টহাউসে পৌঁছেছেন।

দুই উপদেষ্টার সামনে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান ও বিক্ষোভ পরিস্থিতির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে চাঞ্চল্য দেখা দেয়। দুই উপদেষ্টার পরবর্তী ভোলাগঞ্জ সফরও বাতিল করা হয়।

উপদেষ্টারা জাফলং থেকে চলে যাওয়ার পর সামনে আসেন বিক্ষোভকারীরা। তখন তারা নিজেদের বক্তব্য বিভিন্ন মিডিয়াতে দেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপদেষ্টাদের গাড়ি বহন আটকে প্রথম সরাসরি কথা বলেন পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন ছাত্রদল সভ্পাতি আজির উদ্দিন।

তিনি উপদেষ্টা রিজওয়ানাকে সরাসরি বলেন, ‘ম্যাডাম পাথর না তুললে আমাদের এলাকা বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। পাথর কোয়ারি বন্ধ থাকলেও চুরি হয়ে যাচ্ছে। পাথর তুলতে হবে। এ ছাড়া আর কোনো পথ নেই।’ আজির এ কথা বলার পর ‘ভুয়া ভুয়া’স্লোগান শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে আজিরকে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিতে দেখা গেছে।

এ ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে আজির বলেন, ‘আমি না, আমরা যা করেছি তা এলাকাবাসীর স্বার্থে করেছি। এ নিয়ে আমার ভিডিওতে আমার বক্তব্য আছে।’

উপদেষ্টাদের সফর শেষে স্থানীয়দের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে একটি ভিডিওতে আজিরকে বলতে দেখা গেছে, ‘আমরা আশা করেছিলাম আজ তিনি (উপদেষ্টা রিজওয়ানা) ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে পাথর কোয়ারি খুলে দিয়ে শ্রমিকদের রুটি রুজির পথ খুলে দেবেন। কিন্তু কিছু দালাল চক্র উনাকে ভুলভাল বুঝিয়ে তিনি শ্রমিকদের পেটে লাথি মেরে চলে গেছেন। শ্রমিকদের একটাই দাবি, ভাত ও কাজের অধিকার। শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না করে উনি উনার গন্তব্যে পৌঁছে গেছেন। কিন্তু আমরা এই এলাকার পাঁচ লাখ শ্রমিক আন্দোলন করে যাব। যতদিন ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে জাফলং পাথর কোয়ারি খুলে না দেওয়া হবে, ততদিন।’

এর আগে জাফলং পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সিলেটের নান্দনিক ও নৈসর্গিক আবেদন আছে, এইরকম জায়গায় আমরা আর পাথর উত্তোলনে অনুমতি দিব না। এই জায়গা (জাফলং) প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা, আমরা কথা বলেছি পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে, এইখানে পরিবেশবান্ধব পর্যটনের বিকাশের মাধ্যমে যারা পাথর উত্তোলন করেন তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য।’

জাফলং এলাকায় অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলনের ফলে পরিবেশ ধ্বংস হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। জাফলং পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে এই এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে। আপাতত এখান থেকে আর পাথর উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হবে না। এখানে যেসব ক্রাশার মেশিন রয়েছে, সেগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। প্রয়োজনে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলো যদি সঠিকভাবে উন্নয়ন করা যায়, তাহলে এখান থেকে এমন রাজস্ব আসবে, যা লন্ডন থেকে আসা রেমিট্যান্সকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে-আমরা কি পাথর তুলে পরিবেশ ধ্বংস করব, না কি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষা করে পর্যটন বিকাশের মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরি করব।’

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ১৪ নভেম্বর জাফলংকে পরিবেশ-প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণার গেজেট প্রকাশ হয়। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এই আবেদন করেছিল ২০১২ সালে। এরপর থেকে কয়েকটি ধাপে জাফলং থেকে বালু ও পাথর কোয়ারির ইজারা কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছিল। এরপর ২০১৬ সালের ১১ জানুয়ারি জাফলংকে ‘ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য’ ঘোষণা করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এতে জাফলংয়ের ২২ দশমিক ৫৯ একর জায়গাকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়। উন্মুক্ত শিলাস্তর, চুনাপাথর সংরক্ষণ ও গবেষণার জন্য জাতীয় স্বার্থে ২৫ দশমিক ৫৯ একর ভূমিকে ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য ঘোষণা করা হয়েছে জানিয়ে বলা হয়েছিল, ওই ভূমিতে আন্তর্জাতিক মানের একটি ভূতাত্ত্বিক জাদুঘর নির্মাণ করা হবে। জাফলং ইসিএভুক্ত এলাকা ছাড়াও ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য হিসেবে চিহ্নিত এলাকায় একটি ভূতাত্ত্বিক জাদুঘর স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।

তবে গত বছর ৫ আগস্ট পরবর্তী বাস্তবতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুপস্থিতিতে সেখানে ব্যাপক লুটপাটে প্রায় ১ কোটি ঘনফুট পাথর উধাও হয়ে গেছে। সীমান্ত এলাকা হওয়ায় সেখানে সেনা সদস্যরাও যেতে পারেননি। এরপর থেকে জাফলংয়ে বালু ও পাথর লুটপাট চলছে।