দীর্ঘদিনের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে চলেছে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ। স্থানীয় অপরাধী, মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারিদের দাপটে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ এবার কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে শুরু করেছে। এর পুরো কৃতিত্ব দেওয়া হচ্ছে স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রতন শেখকে। তাঁর দৃঢ় পদক্ষেপ, নিরলস প্রচেষ্টা এবং কঠোর অবস্থানে মাদক ও চোরাচালানের নেটওয়ার্ক ভেঙে পড়ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলাটি বাংলাদেশের পর্যটকদের কাছে খুবই পরিচিত সাদাপাথরের কারণে। সম্প্রতি সাদাপাথর লুটপাটকান্ডে দেশসহ বহির্বিশ্বে অনেক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। সাদা পাথর লুটপাট কান্ডে কোম্পানীগঞ্জ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ আদনানকে বদলি করা হয়। সাবেক (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ আদনানের সহায়তায় মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল। মামলা বানিজ্য থেকে শুরু করে সকল অপকর্ম ঘটেছিল এই থানায়। যার কারণে বার বার আলোচনায় এসেছে এই থানায় দায়ীত্বপ্রাপ্তদের নাম। সাবেক ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান বদলি হলে তার জায়গায় আসেন নতুন ওসি রতন শেখ।
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলাটি মাদক কেনাবেচা এবং বিভিন্ন ধরণের অপরাধের আখড়া হিসেবে পরিচিত ছিল। স্থানীয় প্রভাবশালী মহল, অপরাধী ও সাবেক ওসির যোগসাজশে এই অবৈধ ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠেছিল। এতে তরুণ প্রজন্ম ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছিল এবং জনজীবনেও তৈরি হচ্ছিল এক ধরণের ভীতি ও নিরাপত্তাহীনতা। এই পরিস্থিতিতে ওসি রতন শেখের যোগদান যেন ছিল এক আশার আলো।
যোগদানের পর থেকেই ওসি রতন শেখ এই অঞ্চলে মাদক ও চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। তিনি তাঁর থানাকে ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি একাধিক টিম গঠন করে মাঠ পর্যায়ে কঠোর নজরদারি শুরু করেন। তাঁর নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে তিনি বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারো করেছেন।
শুধু মাদক ও চোরাকারবারি নয় সাদা পাথরের অবৈধ উত্তোলন ও পাচার রোধে ওসি রতন শেখের নেতৃত্বে কোম্পানীগঞ্জ থানার পুলিশ জোরদার অভিযান পরিচালনা করছে। এই বিশেষ অভিযানে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি বেশ কিছু স্থানে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধভাবে উত্তোলন করা সাদা পাথর জব্দ করা হয়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, আমাদের ব্যবসার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নিরাপত্তা পরিস্থিতি আগে ভয়ঙ্কর ছিল। চোর-ডাকাত, মাদককারবারির দৌরাত্ম্যের কারণে ব্যবসা অনেক সমস্যায় পড়তে হতো। কিন্তু বর্তমানে সেই সব কর্মকাণ্ড ব্যাপকহারে কমে এসেছে। এতে ব্যবসা প্রসারের পাশাপাশি স্থানীয় অর্থনীতিও ইতিবাচক প্রভাব পেয়েছে।
স্থানীয় এক প্রবীণ ব্যক্তি জানান, আমরা অনেক বছর ধরে এখানে বসবাস করছি, বহু ঘটনার সাক্ষী। কিন্তু বর্তমানে পরিবর্তন সত্যিই চোখে পড়ার মতো। কোম্পানীগঞ্জ থানার নতুন ওসি রতন শেখ শুধু আইন প্রয়োগকারী নন, তিনি এক ধরনের সমাজ সংস্কারক হিসেবেও আবির্ভূত হয়েছেন। তার সাহস এবং জনসেবার মনোভাব আমাদের ভবিষ্যতের জন্য আশার আলো জাগিয়েছে।
তবে, মাদক ও চোরাকারবারিদের শিকড় অনেক গভীরে থাকায় এই লড়াই সহজ নয়। সমালোচকরা বলছেন, এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে এবং কোনো প্রভাবশালীর চাপ যেন ওসি রতন শেখের উপর না আসে, সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি রতন শেখ এ বিষয়ে বলেন, আমার মূল লক্ষ্য হলো ১০০℅ সততার সাথে কোম্পানীগঞ্জের সাদা পাথর রক্ষা, মাদকমুক্ত এবং অপরাধমুক্ত একটি সুন্দর জনপদ হিসেবে গড়ে তোলা। আমি আমার দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করে যাব। সাংবাদিক ভাই এবং স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা পেলে এই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।
তাঁর এই দৃঢ় অঙ্গীকার এবং কার্যকর পদক্ষেপ স্থানীয়দের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে। তারা আশা করছেন, ওসি রতন শেখের নেতৃত্বে কোম্পানীগঞ্জ শীঘ্রই এই অন্ধকার জগৎ থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাবে।
উল্লেখ্য, ওসি রতন শেখ এর আগে ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত জাফলং টুরিষ্ট পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে সিলেট ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। এছাড়া তিনি শরিয়তপুরের শিবচর থানায় ওসি হিসেবে দক্ষতা, সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করেছেন।