, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫, ২৬ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হলেন ডাক্তার জহির সিলেট জেলা যুবদল নেতাকে দেখতে হাসপাতালে এম এ মালিক জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া ফ্যাসিবাদ নির্মূল হবে না: সিলেটে খেলাফত মজলিসের গণমিছিল বিশ্বনাথে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় নেতাকর্মীদের ধৈর্য্য ধরার আহ্বান লুনার রক্তের ঋণ পরিশোধের জন্য জাতি পরবর্তী সরকারের জন্য অপেক্ষা করবেনা : এডভোকেট জুবায়ের সিলেটে কিশোর গ্যাং লিডার বুলেট মামুন ২ সহযোগীসহ গ্রেফতার যুদ্ধবিরতি কার্যকর : থেমেছে ইসরাইলি হামলা, দলে দলে ঘরে ফিরছেন গাজার মানুষ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ১৮-২০ ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছাতে হয় : সংবাদ সম্মেলনে আরিফুল হক  জনগণের সেবা সহজীকরণের উদ্দেশ্যে ‘জিনিয়া অ্যাপ’ চালু করা হয়েছে : আব্দুল কুদ্দুছ চৌধুরী, পিপিএম ঘুষি মেরে বিমানের মনিটর ভাঙলেন লন্ডন থেকে সিলেট ফেরা যাত্রী

ইলিয়াস আলীর শেষ পরিণতি ঘটে জিয়াউলের ‘কিলিং স্কোয়াডের’ হাতে

বরখাস্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান। ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত র‌্যাবের বিভিন্ন পদে কর্মরত থাকা অবস্থায় নিজের টিম নিয়ে খুন করতেন তিনি। গুম করা ব্যক্তিকে খুন করতে তিনি বলতেন-‘গলফ করো’। অর্থাৎ ওকে খুন করো।

জিয়াউল আহসান এখন কেরানীগঞ্জ বিশেষ কারাগারের ধলেশ্বরী ভবনে ডিভিশনপ্রাপ্ত সেলে বন্দি আছেন।

টেলিফোনে জানতে চাইলে বিশেষ কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার সায়েফ উদ্দিন নয়ন জানান, সুনির্দিষ্ট কী অপরাধে তিনি কারাগারে আছেন বলতে পারছি না। তবে তিনি ১৫টি মামলায় (ধারা ৩০২, ৩০৭, ১০৯, ৩২৬) বন্দি আছেন।

এ সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে গিয়ে জিয়াউল আহসানের নৃশংসতার অসংখ্য কাহিনি জানা গেছে। পলাতক শেখ হাসিনা এবং তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকের নির্দেশেই বেশি মানুষকে গুম-খুন করেছেন জিয়াউল আহসান। তিনি হাসিনা ও তারিক সিদ্দিকের একান্ত অনুগত ও বিশ্বস্ত ছিলেন। তাদের নির্দেশে গুম করে আয়নাঘরে রাখতেন ভিকটিমদের। সেখান থেকে বিভিন্ন কায়দায় খুন করে লাশ গুম করে দেওয়া হতো। জিয়াউল আহসান গুম হওয়া ব্যক্তিদের যমটুপি পরিয়ে মাইক্রোবাসে করে পোস্তগোলা ব্রিজ, কাঞ্চন ব্রিজ কিংবা কাঁচপুর ব্রিজে নিয়ে গিয়ে গুলি করে লাশ ফেলে দিতেন শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গা নদীতে। একদিনে একজনকে দিয়ে ১১টি এবং আরেকজনকে দিয়ে ১৩টি খুন করারও রেকর্ড আছে। কখনো মাইক্রোবাসেই ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলা হতো। এরপর লাশ রেললাইনের ওপর শুইয়ে দিতেন। ট্রেন এসে লাশ দ্বিখণ্ডিত, ত্রিখণ্ডিত করত।

২০১১ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত সময়ে কমলাপুর থেকে টঙ্গি পর্যন্ত ট্রেনে কাটা যত অজ্ঞাত পরিচয়ের লাশ পাওয়া যেত, তা সবই জিয়াউল আহসানের খুন করা। বেশিরভাগ খুন করা হয়েছে বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীতে। একটি নির্দিষ্ট নৌকা ছিল। সেই নৌকায় করে যমটুপি পরা ব্যক্তিদের মাঝনদীতে নিয়ে টুপি খুলতেন। চোখ বাঁধা অবস্থায়ই থাকত। মাথার একেবারে কাছে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করতেন। ফিনকি দিয়ে রক্ত ও মগজ এসে পড়ত জিয়াউল আহসানের হাতে। তখন তিনি উল্লাস করতেন। কখনো আবার দেখা যেত আগেই হত্যা করা লাশ নৌকায় তুলে নিচে ও উপরে সিমেন্টভর্তি বস্তার সঙ্গে বেঁধে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিতেন, যাতে লাশ পানির নিচে তলিয়ে যায়। হতভাগ্য বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর শেষ পরিণতিও ঘটে জিয়াউলের হাতে।

বিএনপির প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতা সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলী ও তার গাড়িচালক আনসার আলীকে ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে বনানীর রাস্তা থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তি পরিচয়ে অপহরণ করা হয়।

পরে ইলিয়াস আলীকে গুম করার পর হত্যা করে মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের নেতৃত্বে একটি ‘কিলিং স্কোয়াড’। হত্যার পর খুনিচক্র ইলিয়াস আলীর লাশ যমুনা নদীতে ফেলে দেয়। এই চাঞ্চল্যকর গুম ও হত্যার নির্দেশদাতা ছিলেন খোদ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জনপ্রিয়

বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হলেন ডাক্তার জহির

ইলিয়াস আলীর শেষ পরিণতি ঘটে জিয়াউলের ‘কিলিং স্কোয়াডের’ হাতে

প্রকাশের সময় : ১০:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৫

বরখাস্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান। ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত র‌্যাবের বিভিন্ন পদে কর্মরত থাকা অবস্থায় নিজের টিম নিয়ে খুন করতেন তিনি। গুম করা ব্যক্তিকে খুন করতে তিনি বলতেন-‘গলফ করো’। অর্থাৎ ওকে খুন করো।

জিয়াউল আহসান এখন কেরানীগঞ্জ বিশেষ কারাগারের ধলেশ্বরী ভবনে ডিভিশনপ্রাপ্ত সেলে বন্দি আছেন।

টেলিফোনে জানতে চাইলে বিশেষ কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার সায়েফ উদ্দিন নয়ন জানান, সুনির্দিষ্ট কী অপরাধে তিনি কারাগারে আছেন বলতে পারছি না। তবে তিনি ১৫টি মামলায় (ধারা ৩০২, ৩০৭, ১০৯, ৩২৬) বন্দি আছেন।

এ সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে গিয়ে জিয়াউল আহসানের নৃশংসতার অসংখ্য কাহিনি জানা গেছে। পলাতক শেখ হাসিনা এবং তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকের নির্দেশেই বেশি মানুষকে গুম-খুন করেছেন জিয়াউল আহসান। তিনি হাসিনা ও তারিক সিদ্দিকের একান্ত অনুগত ও বিশ্বস্ত ছিলেন। তাদের নির্দেশে গুম করে আয়নাঘরে রাখতেন ভিকটিমদের। সেখান থেকে বিভিন্ন কায়দায় খুন করে লাশ গুম করে দেওয়া হতো। জিয়াউল আহসান গুম হওয়া ব্যক্তিদের যমটুপি পরিয়ে মাইক্রোবাসে করে পোস্তগোলা ব্রিজ, কাঞ্চন ব্রিজ কিংবা কাঁচপুর ব্রিজে নিয়ে গিয়ে গুলি করে লাশ ফেলে দিতেন শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গা নদীতে। একদিনে একজনকে দিয়ে ১১টি এবং আরেকজনকে দিয়ে ১৩টি খুন করারও রেকর্ড আছে। কখনো মাইক্রোবাসেই ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলা হতো। এরপর লাশ রেললাইনের ওপর শুইয়ে দিতেন। ট্রেন এসে লাশ দ্বিখণ্ডিত, ত্রিখণ্ডিত করত।

২০১১ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত সময়ে কমলাপুর থেকে টঙ্গি পর্যন্ত ট্রেনে কাটা যত অজ্ঞাত পরিচয়ের লাশ পাওয়া যেত, তা সবই জিয়াউল আহসানের খুন করা। বেশিরভাগ খুন করা হয়েছে বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীতে। একটি নির্দিষ্ট নৌকা ছিল। সেই নৌকায় করে যমটুপি পরা ব্যক্তিদের মাঝনদীতে নিয়ে টুপি খুলতেন। চোখ বাঁধা অবস্থায়ই থাকত। মাথার একেবারে কাছে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করতেন। ফিনকি দিয়ে রক্ত ও মগজ এসে পড়ত জিয়াউল আহসানের হাতে। তখন তিনি উল্লাস করতেন। কখনো আবার দেখা যেত আগেই হত্যা করা লাশ নৌকায় তুলে নিচে ও উপরে সিমেন্টভর্তি বস্তার সঙ্গে বেঁধে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিতেন, যাতে লাশ পানির নিচে তলিয়ে যায়। হতভাগ্য বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর শেষ পরিণতিও ঘটে জিয়াউলের হাতে।

বিএনপির প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতা সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলী ও তার গাড়িচালক আনসার আলীকে ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে বনানীর রাস্তা থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তি পরিচয়ে অপহরণ করা হয়।

পরে ইলিয়াস আলীকে গুম করার পর হত্যা করে মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের নেতৃত্বে একটি ‘কিলিং স্কোয়াড’। হত্যার পর খুনিচক্র ইলিয়াস আলীর লাশ যমুনা নদীতে ফেলে দেয়। এই চাঞ্চল্যকর গুম ও হত্যার নির্দেশদাতা ছিলেন খোদ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।